অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ ও সমাধান চুল মানুষের সৌন্দর্যের বড় অলংকার। ইদানীং লকডাউনে থেকে বেশিরভাগ মানুষের সমস্যা হচ্ছে যে, খুবই দ্রুতবেগে চুল পড়ে যাচ্ছে।
অনেকের তো আবার টাক হওয়ার অবস্থা। যেকোনো সমস্যার সমাধান করার আগে খুঁজতে হবে এই সমস্যা হওয়ার কারণ।
চুল পড়ার ডাক্তারির চিকিৎসা
প্রথমে বের করতে হবে চুল কেন পড়ছে। এটি কী বংশগত নাকি অ্যালার্জিজনিত, অপুষ্টি নাকি চুল পরিচর্যার ভুল টেকনিক অবলম্বন করার জন্য। পিআরপি অর্থাৎ প্লাটিলেট রিচড প্লাজমা চুল গজানোর আধুনিক চিকিৎসা।
আমাদের রক্তে তিন ধরনের কণিকা আছে। এর মধ্যে অণুচক্রিকা বা প্লাটিলেট আমাদের দেহের ক্ষয় পূরণ ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
পিআরপিতে রোগীর দেহ থেকে রক্ত নিয়ে সেন্ট্রিফিউজ মেশিনের সাহায্যে এই তিন ধরনের কণিকা পৃথক করা হয়।
ডায়াবেটিসে ব্যবহৃত ইনসুলিন সিরিঞ্জের সাহায্যে এ প্লাটিলেট চুল পড়ে যাওয়ার স্থানে ইনজেকশন আকারে দেয়া হয়।
এটি বিশ্বব্যাপী কার্যকরী ও আধুনিক চিকিৎসা। আমাদের মাথায় প্রায় এক লাখ চুল আছে। প্রতিদিন ১০০টি চুল পড়া স্বাভাবিক।
এর চেয়ে বেশি পড়লে তা অস্বাভাবিক। কীভাবে বুঝবেন আপনার চুল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পড়ছে। দুই আঙ্গুল দিয়ে ৪০ থেকে ৬০টি চুল ধরে হাল্কা টান দিলে যদি ৫ থেকে ৭টি চুল উঠে আসে তাহলে বোঝা যায় আপনার চুল পড়ার হার বেশি।
এক ধরনের ক্যামেরা চুলের গোড়ায় বসিয়ে মনিটর দিয়ে দেখা হয় চুল পড়ার হার স্বাভাবিক কী না। পিআরপি থেরাপি সাধারণত ৬টি সেশন করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
১২টি সেশন করলে চুলগুলো স্টাবেল হয়। খরচ হেয়ার ট্রান্সপ্লান্টেশনের তুলনায় কম। এটি শতভাগ নিরাপদ।
১২ সেশনের পরও ৫-১০ ভাগ রোগীর মেইনটেনেন্স থেরাপি হিসেবে বছরে ১ থেকে ২ বার পিআরপি আবার করা যেতে পারে।
চিকিৎসা যদি যথাযথভাবে করা যায় তাহলে পিআরপি করলে সাফল্য আসে। এতে চুলের গ্রোথ বুস্টআপ করা হয়। এর সঙ্গে মুখে খাওয়া ও লাগানোর ওষুধও ব্যবহার করতে হয়।
যদি এতেও কাজ না হয় তবে হেয়ার ট্রান্সপ্লানটেশন করা হয়। রোগীর শরীর থেকেই ১-২ মিলিমিটার চুল নিয়ে যেখানে চুল নেই সেখানে প্রতিস্থাপন করা হয়। এই চুল রোগীর সারা জীবনই থাকে। পড়ে যায় না। পূর্ণ ফলাফল পেতে ৬-১৮ মাস সময় লাগে।
চুল পড়া নিয়ে ভীত হওয়ার কিছু নেই। চুল পড়া শুরু হলে প্রাথমিক অবস্থাতেই বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করে চুল পড়ার কারণ নির্ণয় করে চিকিৎসা শুরু করা মঙ্গলজনক।
অল্প বয়সে চুল পড়ার কারণ
টাক পড়ে যাওয়া বেশ বিব্রতকর একটি সমস্যা। যদিও এত শারীরিক কোন ধরণের সমস্যায় পড়তে হয় না তবে ব্যাঘাত ঘটে সৌন্দর্যে।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাথার চুল পড়তে থাকলে এবং একটা পর্যায়ে টাক পড়ে গেলে তাও মেনে নেয়া যায় কিন্তু যদি অল্প বয়সে টাক পড়তে শুরু করে তবে তা রীতিমত ভয়ঙ্কর
কিন্তু কেন চুল পড়ে যাচ্ছে?
১. বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, অল্প বয়সে চুল উঠে যাওয়া এবং টাক পড়ার একটা বড় কারণ হতে পারে অতিরিক্ত স্ট্রেস।
২. চুলের সঠিক যত্ন না নেওয়ার কারণেও তা উঠে যেতে পারে।
৩. অতিরিক্ত ব্লিচিং, ডাই করার কারণেও চুল উঠে যেতে পারে।
৪. কম বয়সে চুল উঠে যাওয়ার অন্যতম কারণ অস্বাস্থ্যকর ডায়েট।
৫. টক্সিন এবং অতিরিক্ত দূষণ চুলের গোড়া দুর্বল করে দেয়। এর ফলে চুল আঁচড়াতে গেলেই তা উঠে যেতে থাকে।
৬. হরমোনের পরিবর্তন, থাইরয়েড এবং বিভিন্ন রোগের কারণেও চুল উঠতে পারে।
অকালে চুল পড়া যেভাবে প্রতিরোধ করা যায়-
১. সঠিক ডায়েট মেনে খাবার খেতে হবে।
২. নিয়মিত চুল পরিষ্কার করতে হবে। সপ্তাহে অন্তত ২ থেকে ৩ বার ভালো করে চুল ধুতে হবে।
৩. চুল পড়া প্রতিরোধে খাবার মেন্যুতে আয়রন, জিঙ্ক এবং ভিটামিন ডি পূর্ণ খাবার রাখতে হবে।
৪. নিজেকে যথাসম্ভব চিন্তামুক্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে।
৫. এছাড়া বন্ধ করতে হবে ধূমপান।
চুল পড়া রোধে করণীয়
বহুল পরিচিত একটি সমস্যার নাম চুল পড়া। নানা কারণে চুল পড়তে পারে। ধুলাবালু, বায়ুদূষণ ও আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণেও চুল পড়ার হার বেড়ে যায়।
চুল ধুতে রাসায়নিক উপাদানযুক্ত শ্যাম্পু পরিহার করে প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি শ্যাম্পু ব্যবহার এবং শ্যাম্পু করার পর অবশ্যই কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে।
গোসলের পর চুলের গোড়া নরম হয়ে যায়, এ সময় জোরে চাপ দিয়ে চুল মুছলে কিংবা আঁচড়ালে চুল পড়া ও ভেঙে যাওয়ার হার অনেকাংশে বেড়ে যায়।
অনেকেই চুল শুকাতে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করেন। ড্রায়ারের গরম বাতাস চুলের জন্য ক্ষতিকর। চুলে গরম বাতাস বা কোনো ধরনের তাপ নেওয়া যাবে না, এতে চুল পড়া বেড়ে যাবে।
চুল পড়া বন্ধে বা চুলের যত্নে অবশ্যই নিয়মিত তেল ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে নারকেলের তেল ব্যবহার করতে পারেন।
চুল মসৃণ ও স্বাস্থ্যবান করে তুলতে নারকেলের তেলের জুড়ি মেলা ভার।
নারকেলের তেলের অ্যান্টি–ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য চুলকে ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
কেন চুল পড়ছে, এটি জানতে হলে প্রথমেই জানতে হবে আপনি কী খাচ্ছেন।
অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস চুল পড়ার অন্যতম কারণ। ডিম, দুধ, সামুদ্রিক মাছ ও ভিটামিন-ই যুক্ত খাবার চুলের জন্য খুবই উপকারি।
চুল পড়া রোধে মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং দুশ্চিন্তামুক্ত থাকা জরুরি।
শরীর সুষম খাবার না পেলে ফিডব্যাক কখনোই ভালো দেবে না; বরং তৈরি হতে পারে হরমোনাল ইমব্যালেন্স। তাই চুল সুস্থ রাখতে চাইলে সুস্থ থাকতে হবে ভেতর থেকে।
চুল পড়ার ওষুধ
বয়সের কারণে চুল পড়ে যাওয়া বা টাক পড়ার জন্য সবচেয়ে বেশি যে ওষুধ ব্যবহার করা হয় তার নাম মিনোক্সিডিল। এটি ক্রিম, ফোম বা স্প্রে আকারে পাওয়া যায়।
সঠিক নিয়মে ব্যবহার করলে চুল পড়ার হার কমায়, নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে। নারী-পুরুষ সবাই ব্যবহার করতে পারেন।
আরেকটি ওষুধ আছে যার নাম ফিনেস্টেরাইড। এটি কাজ করে পুরুষ হরমোন টেস্টোস্টেরনের ক্রিয়াকলাপের ওপর।
টেস্টোস্টেরন থেকে এর বাই প্রোডাক্ট ডিএইচটি হতে বাধা দেয় এ ওষুধ। এটি কেবল পুরুষেরাই ব্যবহার করতে পারবেন। আবার এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে।
যে ওষুধই ব্যবহার করুন না কেন, তা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দিষ্ট মেয়াদে ব্যবহার করতে হবে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তো আছেই, তা ছাড়া এগুলো তখনই ব্যবহার করতে হবে, যখন হেয়ার ফল