প্রেসারের ওষুধ কি সারাজীবন খেতে হবে কি না এবিষয়ে আলোচনা করবো? প্রিয় দর্শক ভাই ও বোনেরা আপনারা যারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রোগের কারণ খুঁজছেন। তারা হয়তো আমার এই সাইডে অনেক রোগের সমাধান পেয়ে যাবেন।
প্রেসারের ওষুধ কি সারাজীবন খেতে হবে?
প্রেসারের রোগীরা ডাক্তারের কাছে আসলে তাদের মুখে একটাই প্রশ্ন থাকে আপনি যে ওষুধ দিয়েছেন আমি কি সারা জীবন এই ওষুধই খেয়ে যাবো।
আসলে প্রশ্নটা খুবই জটিল আবার সহজও। রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন সাধারণ কোনো রোগ নয়।
আবার শুধু ওষুধ খেয়ে যাওয়ার বিষয় এটি নয়। উচ্চ রক্তচাপের অল্প কিছু কারণ বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন। অধিকাংশ কারণ অজানা।
এজন্য উচ্চ রক্তচাপ হলেই ওষুধ খাবেন ভালো কথা। কিন্তু কারণ না জেনে ওষুধ সেবন করলে অনেক ক্ষেত্রেই ফলাফল ইতিবাচক হয় না।
তবে জনশ্রুতি আছে, উচ্চ রক্তচাপ নিরোধক ওষুধ একবার খেলে সারাজীবন চালিয়ে যেতে হয়। সারাজীবন রোগী হয়ে থাকার ভয়ে অনেকেই ব্লাডপ্রেসার কন্ট্রোলের কথা ভুলে যান।
ওষুধ খাওয়ার অভ্যস্ততা ত্যাগ করেন। এটি ভালো কথা নয়। উচ্চ রক্তচাপের কারণ অজানা থাকলে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য আপনাকে ওষুধ সেবন করতে হবে সারাজীবন।
অনেক সময় স্থূলতা, ডায়াবেটিসের সঙ্গী হিসেবে উচ্চ রক্তচাপ বিরাজ করে। সেক্ষেত্রে প্রেসার কমানোর ওষুধ শুধু সেবন করেই কাজ হয় না।
খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রা সব কিছুই পরিবর্তন করতে হয়। কিডনির অসুখের কারণেও উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে।
কিডনি ধমনী সংকুচিত হয়ে গেলে কিডনি ফেইলুর, কিডনি নিকটস্থ গ্গ্নান্ডে টিউমার হলেও উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে রোগ আবিষ্কার করা সম্ভব হলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
ব্লাডপ্রেসার নিয়ন্ত্রক ওষুধ নিয়মিত সেবনের ফলে অনেক সময় রক্ত চাপ কমে আসতে পারে। ডায়রিয়া, অধিক বমি এসব কারণেও রক্তচাপ কমে আসতে পারে।
প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধের ডোজ কমিয়ে এনে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। বিস্ময়কর হলেও সত্য, অনেকের আবার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলেই উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই বিষয়টি সুনিশ্চিত করে উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা নিতে হবে।
এই বিশেষ অবস্থাটিকে আমরা চিকিৎসার পরিভাষায় হোয়াইট কোট হাইপারটেনশন বলে থাকি। প্রেসার নিয়ন্ত্রক পিল অনিয়মিতভাবে এবং অপর্যাপ্ত পরিমাণে সেবন করলে স্ট্রোক। কিডনি ফেইলুর এসব মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে।
অনেক ক্ষেত্রে একক মাত্রার এবং একটি মাত্র প্রেসার কন্ট্রোল পিল খেয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে না। সেক্ষেত্রে একাধিকবার এবং ভিন্ন ভিন্ন ধরনের প্রেসার কন্ট্রোলের ওষুধ সেবনের প্রয়োজন হতে পারে।
এ অবস্থাটি রোগীর জন্য বিরক্তিকর এবং কষ্টকরও বটে। বিশেষ করে যারা বার্ধক্যে উপনীত হন তাদের পক্ষে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রক ওষুধ সময় ধরে সেবন করা সম্ভব হয় না।
উচ্চ রক্তচাপের প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসকেরা মূত্রবর্ধক ওষুধ এবং অনেক ক্ষেত্রে ডায়াটেশিয়ানের পরামর্শে জীবনযাত্রার কৌশল পরিবর্তন তথা ব্যায়াম ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
খাবারে অতিরিক্ত লবণ তো বটেই, লবণযুক্ত খাবার যেমন শুঁটকি, লোনা ইলিশ, সালাদ এসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
উচ্চ রক্তচাপের পারিবারিক ইতিহাস না থাকলে স্থূল ব্যক্তিরা জীবনযাত্রার কৌশল পরিবর্তনের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ থেকে রেহাই পেতে পারেন।
উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেসারের সমস্যাকে বলা হয় ‘নীরব ঘাতক’। কারণ এটি শরীরকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় অনিয়ম হলেই।
আজকাল শুধু বয়স্ক মানুষই নন, যে কোনও বয়সী মানুষের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতা দেখা যায়। বেশি ওজন, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, সঠিক খাদ্যাভ্যাসের ঘাটতির কারণে এমনটা হচ্ছে।
কারও আবার জিনঘটিত কারণেও এই সমস্যা দেখা যায়। ডাক্তারের পরামর্শ মতো ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি খাদ্যাভাসেও কড়া নজর দেওয়া দরকার।
হাই প্রেসার রগিদের করনিও কি
১.প্রতিদিন তাজা ফল যেমন লেবু, পেয়ারা, আমলকী, আপেল, কমলালেবু, বেদানা, কলা, ন্যাশপাতি, পেঁপে ইত্যাদি খেতে হবে।
২. ডায়েটে রাখতে হবে প্রচুর সবুজ শাকসবজি যেমন পালংশাক, কলমিশাক, বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, শসা, লাউ, মটরশুঁটি, ঢ্যাঁড়স, বেগুন, কুমড়া।
৩. খাদ্যতালিকায় পটাশিয়াম রয়েছে এমন খাবারের পরিমাণ বাড়াতে পারলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। ডাবের জল, কলা, টমেটো-সহ কিছু সবজিতে পটাশিয়াম আছে।
৪. সকালে খালিপেটে একমুঠো ভেজানো বাদাম যেমন আমন্ড, আখরোট, কাজু খেতে পারেন।
৫. মাছ খান বেশি করে। জ্যান্ত মাছের উপকারিতা সবচেয়ে বেশি। তবে খুব তৈলাক্ত মাছ এড়িয়ে যান।
কিখাবেন না?
নুন ও বেশি নুনযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। প্যাকেটজাত খাবার খাওয়াও চলবে না একেবারেই। অতিরিক্ত ঘি-মাখন; ফ্যাটজাতীয় যেমন কেক, পেস্ট্রি, পরোটা, লুচি, আইসক্রিম বেশি খাওয়া যাবে না। মদ্যপান ও ধুমপানের অভ্যাসও ত্যাগ করুন।